Sunday, November 30, 2014

আল্লাহ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই


পবিত্র কুরআন নিয়ম ঠিক করে দিয়েছে যে, তোমরা আল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে নাও । আল্লাহকে সঙ্গে নেওয়া ব্যতীত না দুনিয়া গড়বে, না আখেরাত গড়বে । আল্লাহবিহীন জীবনে না ভেতরে সুখ আছে, না বাইরে সুখ আছে ।
একজন মানুষ যদি সমগ্র জগতের সমুদয় সম্পদের মালিক হয়ে যায়,
সমগ্র জগতের সমুদয় রূপ-সৌন্দর্যকে যদি পাশে বসিয়ে নিতে সক্ষম হয়,
সমগ্র জগতের ক্ষমতার তাজ যদি তার মাথায় সুশোভিত হয়,
সমগ্র জগতের ধনভান্ডার গুটিয়ে যদি তার পায়ে এসে পতিত হয়,
কিন্তু যদি আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এসবের মধ্যে এমন কোনো বস্তু নেই, যেটি তার ভেতরে অন্ধকারকে দূর করতে সক্ষম হবে ।
এমন কোনো বস্তু নেই, যেটি তার আত্মার ছটফটানির প্রতিকার হতে পারে ।
এমন কোনো বস্তু নেই, যেটি তার ভেতরের অন্ধকার জগতকে আলোকিত করতে সক্ষম হবে ।
অন্তরের মলম একমাত্র আল্লাহ ।
আত্মার অন্ধকারের আলো একমাত্র আল্লাহ ।
ভেতরের সকল অস্থিরতার একমাত্র প্রতিকার আল্লাহ ।
বাইরের ব্যথা-বেদনার নিরাময়কারী আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই ।
ভেতরের চিন্তা-পেরেশানি বিদূরিতকারী আল্লাহ ছাড়া কেউ নয় ।
তাই আসুন আমরা সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করি এবং তাঁর হুকুম আহকামগুলো মেনে চলি । আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন ।

Thursday, October 30, 2014

নবীজি (সা.) এর প্রতি এক মহিলার ভালবাসা


হযরত ওমর (রা.) রাতে টহল দিচ্ছিলেন । এক মহিলা চরকা ঘোরাতে ঘোরাতে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর স্মরণে কবিতা পাঠ করছিলঃ

"আপনার উপর দরুদ ও সালাম আল্লাহর ও আল্লাহর নেক বান্দাদের, 
আপনি তো সেই ব্যক্তি, যিনি রাত জেগে কাঁদতেন এবং আল্লাহকে ভয় করতেন ।
আমি জানি না, কেয়ামতের দিন আমার রব আমাকে আপনার সঙ্গে মিলিত হতে দেবেন কি দেবেন না ।
সময় যেমন রং বদলাচ্ছে, তেমনি মানুষের আমলও পরিবর্তিত হচ্ছে । জানি না কোন অবস্থায় আমার মৃত্যু হয় । আপনার সঙ্গে মিলিত হওয়া আমার ভাগ্যে জোটে কি-না ।" 

হযরত ওমর (রা.) ঘরটির দিকে এগিয়ে গেলেন । দরজায় করাঘাত করলেন । সময়টা ছিল মধ্যরাত । মহিলা জিজ্ঞেস করল, কে?
আমি ওমর ।
মহিলা বলল, এত রাতে আমার ঘরে ওমরের কি কাজ?
হযরত ওমর (রা.) বললেন, আল্লাহর ওয়াস্তে দরজাটা খুলে দাও ।
মহিলা ঘরের দরজা খুলে দিল । হযরত ওমর (রা.) বললেন, একটু আগে যে পংক্তিগুলো আবৃত্তি করছিলে, সেগুলো আমাকে শোনাও । তুমি আল্লাহর রাসূলের ভালবাসায় যে কথাগুলো উচ্চারণ করছিলে, সেগুলো আমাকে শোনাও ।
এটি কেমন অন্তর - যেটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর ভালবাসায় কখনও প্রকম্পিত হয় না? এই পাথরগুলো বুকে ধারণ করে যদি আমরা মৃত্যুবরণ করি, তাহলে আমাদের মূল্য কী?
গায়ে ধবধবে শাদা পোশাক দেখলে মানুষ মনে করে, ইনি বড় মিয়া সাহেব । আরে, এটাও দেখো, ভেতরটা মাল-আবর্জনায় ঠেসে আছে কিনা ।
আল্লাহ তো মানুষের অন্তর দেখেন যে, তার মধ্যে কী আছে, কে আছে । 
আল্লাহ তা"আলা বলেনঃ 

"এবং অন্তরে যা কিছু আছে, সব প্রকাশ করা হবে ।" (১০০ঃ১১) 
কেয়ামতের দিন আল্লাহ পাক অন্তরগুলোকে চিরে-চিরে দেখবেন, বান্দা কাকে হৃদয় বসিয়ে এসেছে । এই পাষাণহৃদয় কাকে দ্বারা সজ্জিত করেছে । এর মাঝে কে আছে ।
যিনি এত দুঃখ-কষ্টের মাঝেও ভোলেননি, আমরা তাঁর জীবনকে তুলে বাইরে ফেলে দিয়েছি । এর জন্য কখনও আক্ষেপও জাগেনি যে, হায়, আমি কি করলাম! কাকে ছুঁড়ে ফেললাম আর কাকে গ্রহণ করলাম! আমরা একথাটিই শিক্ষা করার দাওয়াত দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) একটি পরিপূর্ণ জীবন এনেছেন, যার নাম ইসলাম । ইসলামের উপর চলা শেখানো হয় এ তাবলীগের মেহনতে । 
ইসলাম বিনা শিক্ষার সওদা নয় - ইসলাম শিক্ষা করার বিষয় । 

Monday, October 27, 2014

কুদৃষ্টি-কুসম্পর্কের ভয়াবহ ক্ষতির বিবরণ ও অমূল্য উপদেশ


এখন আমি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোকপাত করতে চাচ্ছি । তা এই যে, বর্তমান যমানায় দ্বীনদার, নেককার, মোত্তাকী-পরহেযগার ও তরীকতের সমস্ত ছালেকীনের জন্য নারীর ফেতনার চেয়ে দাড়ি-মোচ বিহীন সুশ্রী বালক-তরুণের ফেতনা বেশী মারাত্মক ও বেশী ধ্বংসাত্মক । যেহেতু সুশ্রী বালক-তরুণদের ফেতনার পথে অর্থাৎ তাদের সাথে কোন পাপাত্নক কাজে লিপ্ত হওয়ার পথে বাহ্যিক বাধা-বিঘ্ন কম, তাই শয়তান মানুষকে সহজ ও দ্রুততর এই ফেতনায় (পাপের ফাঁদে) লিপ্ত করে দেয় । এর বিপরীতে না-মাহরাম ভিন নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ বেশী থেকে বেশী কুদৃষ্টির অপরাধই সংঘটিত হয় ।

     এর কুফল সম্পর্কে হাকীমুল-উম্মত, মুজাদ্দিদুল-মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেন যেঃ

     ১। না-মাহরাম নারী ও সুদর্শন বালক-তরুণের সাথে যে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখা, যেমন তার দিকে দৃষ্টি করা, মনে আনন্দ লাভের জন্য তার সাথে কথা বলা, নির্জনে তার সাথে বসা বা অবস্থান করা অথবা তার মনতুষ্টির জন্য সাজগোজ করে পোশাক পরিধান করা, মোলায়েম ভাষায়, মিষ্টি সুরে কথা বলা ইত্যাদি - এ ধরনের সম্পর্কের দরুণ যে সকল ক্ষতি ও খারাবী পয়দা হয় এবং যে সকল মুসীবতের সম্মুখীন হতে হয় তা লিখে শেষ করার মত ভাষা আমার কাছে নেই । 
     ২। এশকে-মাজাযী বা উক্তরূপ কু-সম্পর্ক আল্লাহর আযাব । (যেভাবে দোযখের মধ্যে না মৃত্যু, না জীবন- এরূপ এক আযাবের মধ্যে থাকবে, মরেওনা বাঁচেওনা এমন এক যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার মধ্যে কাটাবে) তদ্রূপ, কুদৃষ্টি করার পর কুসম্পর্ক-কুআকর্ষণে আক্রান্ত হয় মানুষ সর্বদা ছটফট করতে থাকে । অস্বস্তির আগুনে জ্বলতে থাকে । আরামের ঘুম থেকেও মাহরূম হয়ে যায় । দ্বীন-দুনিয়া সবই ধ্বংস হয় । অবশেষে "পাগলা-গারদে" ভর্তি হতে হয় । আজকাল পাগলা গারদের শতকরা নব্বই জনই কুপ্রেম-কুসম্পর্কের রোগী যারা টিভি, ভিসিআর, সিনেমা ও নভেল পাঠের পরিণামে পাগল হয়ে গেছে ।
     ৩। কুদৃষ্টির পর অসৎ প্রেমের শিকার হয়ে যদি কখনও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে উভয়ে উভয়ের চোখে চিরদিনের জন্য "ঘৃণার পাত্র" হয়ে যায় । লজ্জিত ও ঘৃণিত অনুভূতির দরুণ জীবনে কখনও পরস্পরে চোখে চোখ মিলানো আর সম্ভব হবে না । একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকাতে পারবে না । যেভাবে স্নেহশীল দরদী পিতা আন্তরিক ভাবে চান যে, আমার ছেলেরা সম্মান ও মর্যাদার সাথে থাকুক, কখনও কোন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে অপদস্ত-অপমানিত না হোক, তদ্রূপ, অপার-অসীম দয়া-মায়ার আধার আল্লাহপাকও চান যে, আমার বান্দারা কোন ঘৃণিত কাজে লিপ্ত হয়ে হেয়/ঘৃণ্য ও অপমানিত না হোক । অপরাধমুক্ত থেকে, তাকওয়ার সাথে থেকে মান-ইযযতের সাথে জীবন যাপন করুক । হালালের উপর তুষ্ট থাকুক এবং হারাম থেকে বিরত থাকুক । দুনিয়াদাররা যখন দুনিয়ার স্বাদ-লযযতের দ্বারা তাদের চক্ষু শীতল করে, কলিজা ঠান্ডা করে, তখন আমার বান্দারা যেন আমার ইবাদত ও আমার যিকিরের স্বাদ-লযযতের দ্বারা তাদের চক্ষু শীতল করে এবং কলিজা ঠান্ডা করে । এই শান্তি ও শীতলতা হচ্ছে চিরস্থায়ী । আর দুনিয়ার মোহগ্রস্তদের স্বাদ ও শীতলতা অতি ক্ষণস্থায়ী এবং তাও আবার হাজারো বালা-মুসীবতের দ্বারা পরিবেষ্টিত । একদিকে স্বাদ গ্রহণ করে, আরেক দিকে হাজারো বিপদ তাদেরকে ঘিরে ধরে । 

     তাই আসুন আমরা কুদৃষ্টি থেকে বিরত থাকি এবং আল্লাহর কাছে আমাদের অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন আমাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং আমাদেরকে তার অলী হিসেবে কবুল করে নেন । আল্লাহুম্মা আমীন ।