Monday, October 6, 2014

রাবেয়া বসরির (রহ.) যুহদ ও তাকওয়া


আল্লাহর এক বান্দী রাবেয়া বসরী (রহ.) । রাতে গোসল করে পোশাক পরিবর্তন করে গায়ে সুগন্ধি মাখিয়ে স্বামীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, আমাকে আপনার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
স্বামী যদি বলতেন, না, তাহলে বলতেন, আমাকে অনুমতি দিন।
স্বামী বলতেন, ঠিক আছে যাও।
তারপর মুসল্লায় দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে দিতেন - আল্লাহু আকবর।
রাবেয়া বসরি ফজরের আযান শুনতেন মুসল্লায় বসে।
যৌবন বয়সেই রাবেয়া বসরির স্বামী মারা গেলেন। তৎকালের শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ হাসান বসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন।
যুগের এতবড় একজন ইমাম ও অলী বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন।
বিয়ের জন্য মহিলাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখা হয়।
রাবেয়া বসরী কুশ্রী ছিলেন।
বিয়ের জন্য মহিলাদের বংশকৌলিন্য দেখা হয়।
রাবেয়া বসরী নিম্নবংশের নারী ছিলেন।
না রূপ আছে, না বংশমর্যাদা।
বিয়ের জন্য নারীর অর্থ-সম্পদ দেখা হয়।
রাবেয় বসরী কাফ্রী দাসী ছিলেন।
আরব দাসী হলেও কথা ছিল। রং-রূপ ও দৈহিক কাঠামো পছন্দসই হতো। তাও নয়।
তাহলে তার সম্পদটা কি ছিল?
হৃদয়টা তার এমন সোনালি ও সুন্দর ছিল যে, রাবেয়া বসরি কেয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য অমর হয়ে গেলেন।
ইতিহাস তাঁর জন্য আপন পাতায় জায়গা বের করে নিয়েছে। অথচ বড়-বড় বহু রাজা-বাদশাহও ইতিহাসের পাতায় তেমন ঠাই পায়নি। দু-চার লাইন লিখেই সামনের দিকে চলে গেছে।
রাবেয়া বসরিকে ইতিহাস অনেক জায়গা দিয়েছে।
না তিলি রানী্‌, না তিলি রাজকন্যা।
কিন্তু আল্লাহর দরবারে সফল নারী।
হাসান বসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন।
রাবেয়া বসরি পর্দার আড়ালে বসে কথা বলছেন। বললেন, আপনি যদি আমার চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তাহলে আমি আপনার প্রস্তাবে হ্যাঁ বলব।
হাসান বসরি বললেন, আপনার প্রশ্নগুলো বলুন।
রাবেয়া বসরি বললেন, বলুন, আমার জন্য জান্নাত আছে, নাকি জাহান্নাম?
হাসান বসরি এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি চুপ করে রইলেন।
রাবেয়া বসরি দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন, যখন আমলনামা বিতরণ করা হবে, তখন কারও আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, কারও বাম হাতে।
বলুন, আমার আমলনামা কোন হাতে আসবে?
হাসান বসরি এই প্রশ্নেরও কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি চুপচাপ বসে রইলেন।
রাবেয়া বসরি তৃতীয় প্রশ্নের উত্থাপন করলেন, যখন মানুষের আমল ওজন করা হবে, তখন কারও নেক বেশি হবে, কারও বদ বেশি হবে। বলুন, আমার নেক বেশি হবে, নাকি বদ?
হাসান বসরির কাছে এই প্রশ্নেরও কোনো উত্তর নেই।
রাবেয়া বসরি বললেন, মানুষ যখন পোলসেরাত অতিক্রম করবে, তখন কেউ পার হয়ে যাবে, কেউ নিচে পড়ে যাবে। বলুন, আমি পার হতে পারব, নাকি নিচে পড়ে যাব?
হাসান বসরি বললেন, আমার তো এর একটি প্রশ্নেরও উত্তর জানা নেই।
রাবেয়া বসরি বললেন, তাহলে আপনি চলে যান আর আমাকে প্রস্তুতি নিতে দিন।
বিয়ের জন্য আমার একটুও সময় নেই। 

0 comments:

Post a Comment

Write your comment here.
এখানে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।