Monday, October 27, 2014

কুদৃষ্টি-কুসম্পর্কের ভয়াবহ ক্ষতির বিবরণ ও অমূল্য উপদেশ


এখন আমি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোকপাত করতে চাচ্ছি । তা এই যে, বর্তমান যমানায় দ্বীনদার, নেককার, মোত্তাকী-পরহেযগার ও তরীকতের সমস্ত ছালেকীনের জন্য নারীর ফেতনার চেয়ে দাড়ি-মোচ বিহীন সুশ্রী বালক-তরুণের ফেতনা বেশী মারাত্মক ও বেশী ধ্বংসাত্মক । যেহেতু সুশ্রী বালক-তরুণদের ফেতনার পথে অর্থাৎ তাদের সাথে কোন পাপাত্নক কাজে লিপ্ত হওয়ার পথে বাহ্যিক বাধা-বিঘ্ন কম, তাই শয়তান মানুষকে সহজ ও দ্রুততর এই ফেতনায় (পাপের ফাঁদে) লিপ্ত করে দেয় । এর বিপরীতে না-মাহরাম ভিন নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ বেশী থেকে বেশী কুদৃষ্টির অপরাধই সংঘটিত হয় ।

     এর কুফল সম্পর্কে হাকীমুল-উম্মত, মুজাদ্দিদুল-মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেন যেঃ

     ১। না-মাহরাম নারী ও সুদর্শন বালক-তরুণের সাথে যে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখা, যেমন তার দিকে দৃষ্টি করা, মনে আনন্দ লাভের জন্য তার সাথে কথা বলা, নির্জনে তার সাথে বসা বা অবস্থান করা অথবা তার মনতুষ্টির জন্য সাজগোজ করে পোশাক পরিধান করা, মোলায়েম ভাষায়, মিষ্টি সুরে কথা বলা ইত্যাদি - এ ধরনের সম্পর্কের দরুণ যে সকল ক্ষতি ও খারাবী পয়দা হয় এবং যে সকল মুসীবতের সম্মুখীন হতে হয় তা লিখে শেষ করার মত ভাষা আমার কাছে নেই । 
     ২। এশকে-মাজাযী বা উক্তরূপ কু-সম্পর্ক আল্লাহর আযাব । (যেভাবে দোযখের মধ্যে না মৃত্যু, না জীবন- এরূপ এক আযাবের মধ্যে থাকবে, মরেওনা বাঁচেওনা এমন এক যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার মধ্যে কাটাবে) তদ্রূপ, কুদৃষ্টি করার পর কুসম্পর্ক-কুআকর্ষণে আক্রান্ত হয় মানুষ সর্বদা ছটফট করতে থাকে । অস্বস্তির আগুনে জ্বলতে থাকে । আরামের ঘুম থেকেও মাহরূম হয়ে যায় । দ্বীন-দুনিয়া সবই ধ্বংস হয় । অবশেষে "পাগলা-গারদে" ভর্তি হতে হয় । আজকাল পাগলা গারদের শতকরা নব্বই জনই কুপ্রেম-কুসম্পর্কের রোগী যারা টিভি, ভিসিআর, সিনেমা ও নভেল পাঠের পরিণামে পাগল হয়ে গেছে ।
     ৩। কুদৃষ্টির পর অসৎ প্রেমের শিকার হয়ে যদি কখনও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে উভয়ে উভয়ের চোখে চিরদিনের জন্য "ঘৃণার পাত্র" হয়ে যায় । লজ্জিত ও ঘৃণিত অনুভূতির দরুণ জীবনে কখনও পরস্পরে চোখে চোখ মিলানো আর সম্ভব হবে না । একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকাতে পারবে না । যেভাবে স্নেহশীল দরদী পিতা আন্তরিক ভাবে চান যে, আমার ছেলেরা সম্মান ও মর্যাদার সাথে থাকুক, কখনও কোন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে অপদস্ত-অপমানিত না হোক, তদ্রূপ, অপার-অসীম দয়া-মায়ার আধার আল্লাহপাকও চান যে, আমার বান্দারা কোন ঘৃণিত কাজে লিপ্ত হয়ে হেয়/ঘৃণ্য ও অপমানিত না হোক । অপরাধমুক্ত থেকে, তাকওয়ার সাথে থেকে মান-ইযযতের সাথে জীবন যাপন করুক । হালালের উপর তুষ্ট থাকুক এবং হারাম থেকে বিরত থাকুক । দুনিয়াদাররা যখন দুনিয়ার স্বাদ-লযযতের দ্বারা তাদের চক্ষু শীতল করে, কলিজা ঠান্ডা করে, তখন আমার বান্দারা যেন আমার ইবাদত ও আমার যিকিরের স্বাদ-লযযতের দ্বারা তাদের চক্ষু শীতল করে এবং কলিজা ঠান্ডা করে । এই শান্তি ও শীতলতা হচ্ছে চিরস্থায়ী । আর দুনিয়ার মোহগ্রস্তদের স্বাদ ও শীতলতা অতি ক্ষণস্থায়ী এবং তাও আবার হাজারো বালা-মুসীবতের দ্বারা পরিবেষ্টিত । একদিকে স্বাদ গ্রহণ করে, আরেক দিকে হাজারো বিপদ তাদেরকে ঘিরে ধরে । 

     তাই আসুন আমরা কুদৃষ্টি থেকে বিরত থাকি এবং আল্লাহর কাছে আমাদের অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন আমাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং আমাদেরকে তার অলী হিসেবে কবুল করে নেন । আল্লাহুম্মা আমীন ।

1 comment:

Write your comment here.
এখানে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।